হাজী মােহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ২০০০ সালে কৃষি অনুষদের অধীনে বি.এস.এজি. (অনার্স) প্রােগ্রামে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির মাধ্যমে।
পরবর্তীতে ২০০৫ সালে ফিসারিজ অনুষদ ও এগ্রোইন্ডাট্রিয়াল এ্যান্ড ফুড প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ চালু করা হয়। এরপর ২০০৯ সালে দিনাজপুর সরকারি ভেটেরিনারি কলেজকে ভেটেরিনারি এ্যান্ড এনিম্যাল সায়েন্স হিসেবে আত্তীকরণ করা হয়। এ চারটি অনুষদ থেকেই মূলত ফলিত
গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ফলিত গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সমূহ গ্রাম পর্যায়ে পৌছে দেবার দায়িত্বও তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর বর্তায়। তাছাড়া কৃষকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত এবং কৃষকদের বাস্তব কর্মক্ষেত্রে চিহ্নিত সমস্যা সমূহ নিয়ে গবেষণা করাও বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষক-গবেষকদের অন্যতম দায়িত্ব। তাই বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যমান অন্য ছয়টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় হাজী মােহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কেও মূলত চারটি বিষয়ে কাজ করতে হয়: (১) শিক্ষা, (২) গবেষণা, (৩) প্রশিক্ষণ, এবং (৪) গ্রামােন্নয়ন।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষা ও গবেষণা পরিচালনার কাজ দুইটি এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়মিতভাবে চলতে থাকলেও প্রশিক্ষণ ও গ্রামােন্নয়নের কাজ দুইটি ছিল অবহেলিত। তবে বর্তমানে আই.কিউ.এ.সি. (IQAC) এবং আই.আর.টি. (IRT) থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের
নিয়মিতভাবে চাহিদা-ভিত্তিক ও প্রায়ােগিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। গ্রামােন্নয়নে কাজটি এতদিন শুরু না হলেও গত ০৯ জানুয়ারি ২০২০ সালে “কৃষক সেবা কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে একাজটির যাত্রা শুরু হয়েছে। বৃহত্তর দিনাজপুর অঞ্চলের কৃষকদের শস্য উৎপাদন, প্রাণী সম্পদ ব্যবস্থাপনা
ও মৎস চাষ জনিত সমস্যা সমূহ সমাধানের লক্ষ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৬ জানুয়ারি ২০২০ সালে উদ্বোধন করা হয় “কৃষি, প্রাণি সম্মদ ও মাৎস্য গবেষণা কমপ্লেক্স”। কৃষক সেবা কেন্দ্র ও কৃষি, প্রাণি সম্পদ ও মাৎস্য গবেষণা কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বৃহত্তর দিনাজপুর এলাকায়
কৃষকদের সাথে একটি সেতু বন্ধন তৈরি করা হয়। এ ছাড়াও প্রাণি সম্পদ ব্যবস্থানা, রােগ নিরাময়ের লক্ষ্যে অচিরেই একটি “ভ্রাম্যমান ভেটেরিনারি ক্লিনিক” উদ্বোধণ করা হবে। এসবের মূল লক্ষ্যই হলাে বৃহত্তর দিনাজপুর অঞ্চলের কৃষকসহ দেশের আপামর সকল কৃষককে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের
পক্ষ থেকে সেবা প্রদান করা। শিক্ষক-গবেষকগণ কৃষকদের জমিতে/প্রাণি সম্পদ ব্যবস্থাপনায়/মাৎস চাষ বিষয়ক চাহিদা ভিত্তিক ও আনুসাঙ্গিক খরাচাদি গবেষকগণ বহন করবেন এবং গবেষণান্তে লভ্যাংশ পুরােটাই কৃষক/প্রাণি সম্পদ মালিক/মাৎস চাষিগণ ভােগ করবেন।
কৃষক সেবা কেন্দ্র থেকে প্রাথমিকভাবে দিনাজপুর জেলার সদর উপজেলায় অবস্থানরত বাছাইকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও এতিমখানায় প্রতিযােগিতা মূলক শীতকালীন সজি চাষের ব্যবস্থা করা হবে। এ সব প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেরাই সজি বাগান করে হাতে-কলমে
বাস্তবমূখী জ্ঞান অর্জন করতে পারবে যা পরবর্তী জীবনে তাদের কাজে লাগবে। সজি চাষের এক পর্যায়ে যথাযথ মূল্যায়ন কমিটির মাধ্যমে সজি ভিত্তিক মূল্যায়ন সম্পন্ন করে ১ম, ২য়, ৩য় স্থানকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় এর পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হবে এবং সনদ প্রদান করা হবে।
এভাবে ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন হাতে-কলমে সজি চাষের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযােগ পাবে অপরদিকে উৎপাদিত সজি খেয়ে পুষ্টির অভাব পূরণ করতে পারবে যা তাদের মেধা বিকাশে সহায়ক হবে এবং বাড়তি সজি বাজারে বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন খরচের চাহিদা মেটাতে পারবে। কৃষক সেবা
কেন্দ্রের পরিচালক হিসাবে আমি এ কেন্দ্রের মাধ্যমে হাজী মােহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর সাথে বৃহত্তর দিনাজপুর অঞ্চলের সকল কৃষক-কৃষাণীদের সাথে কার্যকর যােগসূত্র স্থাপন করতে বদ্ধপরিকর। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা,
কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রী সকলেই সর্বাত্বকভাবে এ মহৎ কাজে আমাকে সর্বোচ্চভাবে সহযােগিতা করবেন।
আল্লাহ্ আমাদের সকলের সহায় হউন।